শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
এ বছরের শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন ইভিএমের পরীক্ষামূলক ব্যবহার সাফল্য পাওয়ায় পৌরসভা নির্বাচনেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও নতুন ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান।
সোমবার নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ হতে পারে। পাঁচ শতাধিক উপজেলায় ভোট হবে। ওখানেও এটা (ইভিএম) ব্যবহার করতে পারি। ওভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।”
এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পাঁচ পর্বে উপজেলা পরিষদের ভোট হয়। স্থানীয় ওই নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
ইসির তৈরি নতুন ইভিএম প্রথম ব্যবহার হয় গত ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনে। এরপর খুলনা ও গাজীপুর সিটিতেও স্বল্প পরিসরে তা ব্যবহার করা হয়।
এর মধ্যে রংপুরে একটি কেন্দ্রে, খুলনায় দুটি কেন্দ্রে, গাজীপুরে ছয়টি কেন্দ্রে নতুন ইভিএমে নির্বিঘ্নেই ভোটগ্রহণ হয়।
ইসি সচিব বলেন, “আগামী ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচনের মধ্যে বরিশালে ১০টি কেন্দ্রে, রাজশাহীতে দুটি কেন্দ্রে এবং সিলেটে দুটি কেন্দ্রে আমরা ইভিএম ব্যবহার করব। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে।”
তিনি জানান, প্রতিটি ইভিএমের দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। আগামী দিনগুলোতে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা গেলে অর্থের সাশ্রয় হবে।
অবশ্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারে এ পর্যন্ত গড়ে প্রতি কেন্দ্রে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করছে নির্বাচন কমিশন, যা ব্যালট পেপারের কেন্দ্রগুলোর ব্যয়ের ছয় গুণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যয় বেশি হলেও পুরো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে সুফল আসবে বেশি। এই প্রযুক্তিতে ভোট গণনার ঝামেলা থাকে না বলে ফলাফল ঘোষণায় সময়ও বাঁচবে।
নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেন, ইসির বর্তমান ইভিএম ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে’ শক্তিশালী।
“এ যন্ত্রে কোনোভাবেই কারসাজি করে একজনের ভোট অন্যের দেওয়ার সুযোগ নেই। অটোমেটিক ভেরিফিকেশন হয়েই ব্যালট ইস্যু হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট অথবা এনআইডি দিয়ে শনাক্ত করে ব্যালট-ভোট ইউনিটে ভোটারকে উপস্থিত থেকে ভোট দিতে হবে।”
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ইভিএমকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করার জন্য দেশের দশটি অঞ্চলে মেলা করার চিন্তা রয়েছে তাদের।
ইতোমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে একটি মেলা করা হয়েছে, সেখানে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবেও একটি মেলার করার পরিকল্পনা রয়েছে। মক ভোটিং ও প্রচারের জন্যে প্রতিটি জেলায় দুটি করে ইভিএম পাঠানোর কথা ভাবছে ইসি।
তবে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও কমিশন নেয়নি বলে জানান হেলালুদ্দীন।
তিনি বলেন, “এজন্য আরপি সংশোধন করতে হবে। সব কিছু মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আরপিওতে এ বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনার পরিকল্পনা নেই।”
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একটি ওয়ার্ডে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় সে সময় এ প্রযুক্তি চালু হয়।
Leave a Reply